ভাষা শহীদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক শিক্ষার্থী আবুল বরকতের স্মরণে একটি ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের কড়িডরে নির্মিত ম্যুরালটি সোমবার দুপুরে উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। ম্যুরালটি স্থাপনে সহযোগিতা করেছে সিটি ব্যাংক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ভাষা আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২১শে ফেব্রুয়ারী শহীদ দিবসকে বিশ্বের কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্তির পেছনেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনস্বীকার্য। আর এই ভাষা আন্দোলনের একজন শহীদ হলেন আমাদের শিক্ষার্থী আবুল বরকত। তাঁর স্মরণে নির্মিত এই ম্যুরালটি আমাদের নবীন শিক্ষার্থীর মাঝে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বার্তা প্রদান করবে; অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষাকে স্মরণ করিয়ে দিবে।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালাটিকে আগামীতে সম্প্রসারণের কথা জানিয়ে উপাচার্য বলেন, বড় জায়গা নিয়ে আমরা এটিকে পুর্নস্থাপনের পরিকল্পনা করেছি। যেন এখানে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা যায়। আমাদের দেশকে স্বাধীন করা এবং ভাষাকে প্রতিষ্ঠায় যাঁরা নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন তাদেরকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করানো আমাদের দায়িত্ব।
বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। সম্মানিত অতিথি হিসেবে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড জিয়া রহমান। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান সহ বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, আমি এই ম্যুরালটি নির্মাণে ছোট অবদান রাখতে পারায় নিজেকে গর্বিত মনে করছি। একজন শিক্ষার্থী যখন এই করিডোর দিয়ে হাঁটবে সে আবুল বরকত সহ ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে মনে করবে। আমাদের কাজ হলো আমাদের মহান শিক্ষার্থী যিনি কি-না আমাদের মহান ভাষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁকে সবার সামনে উপস্থাপন করা বিশেষত নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছে।
প্রসঙ্গত, ভাষা শহীদ আবুল বরকত ১৯২৭ সালের ১৩ জুন অবিভক্ত বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলায় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে সপরিবার ঢাকায় চলে আসেন। তিনি ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে চতুর্থ হয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে একই বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তি হন। বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে সংগঠিত আন্দোলনে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শাহাদাত বরণ করেন।